লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা মূলত এক প্রকারের আনুষ্ঠানিক অনুমতি, যা অন্য দেশের নাগরিকদের বিনা নাগরিকত্বে লুক্সেমবার্গ বসবাস এবং কাজ করার অনুমতি প্রদান করে।
লুক্সেমবার্গের নির্দিষ্ট নিয়োগ কারীর অধীনে কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট প্রদান করা হয়। লুক্সেমবার্গের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রাথমিক ভাবে আবেদন করতে হয়।
সাধারণত লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া লুক্সেমবার্গের অভিবাসন নীতিমালার অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে।
লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট সাধারণত নির্দিষ্ট কাজের জন্য অনুমোদিত হওয়ায় পরবর্তীতে কাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের নতুন করে অনুমতি নিতে হয়।
লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে লুক্সেমবার্গের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়।
যথাযথ সকল তথ্য সঠিক ভাবে প্রদানের মাধ্যমে আবেদন ফরম পূরণ করে আবেদন ফি পরিশোধ করে আবেদন পত্র সাবমিট করতে হবে।
বর্তমানে লুক্সেমবার্গের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ইউরো আবেদন ফি প্রদান করতে হয়। যা বাংলা টাকায় প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা।
তবে আবেদন ফি এবং অন্যান্য সকল আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে লুক্সেমবার্গের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা তৈরিতে নূন্যতম প্রায় ৬ লাখ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেসিং
বর্তমানে লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া তুলনামূলক কঠিন। সাধারণত লুক্সেমবার্গের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেসিং প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। যেমন-
প্রথমত লুক্সেমবার্গের কোন কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা কর্তৃক চাকরির প্রস্তাব পেতে হবে-
- এক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা স্থানীয় ও ইউরোপীয় শ্রম বাজারে প্রাথমিক ভাবে চাকরির বিজ্ঞাপন দিবে।
- পরবর্তীতে কাজটির জন্য স্থানীয় কোন প্রার্থী পাওয়া যায়নি প্রমাণ করে বিদেশী কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন করবে।
দ্বিতীয়ত লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে-
- এক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা লুক্সেমবার্গের অভিবাসন নীতিমালা অনুযায়ী আপনার হয়ে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের নিকট ওয়ার্ক পারমিট আবেদন করবেন।
- ওয়ার্ক পারমিট আবেদনের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাকে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ও ডকুমেন্ট দিয়ে সাহায্য করতে হবে।
তৃতীয়ত লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট অনুমোদিত হলে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে-
- এক্ষেত্রে আপনাকে লুক্সেমবার্গ দূতাবাসে সরাসরি উপস্থিত হয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
- ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে অসাধু কর্মকর্তা থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট এবং ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে যে সকল কাগজপত্র জমা দিতে হবে-
- চাকরির চুক্তিপত্র এবং পর্যাপ্ত খালি পৃষ্ঠা যুক্ত বৈধ বাংলাদেশ পাসপোর্ট।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পেশাগত অভিজ্ঞতার প্রমাণ।
- মেডিকেল রিপোর্ট ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- অনলাইন ভিসা আবেদন ফরম এবং ভিসা আবেদন ফি পরিশোধের রশিদ। ইত্যাদি।
লুক্সেমবার্গ কোন কাজের চাহিদা বেশি
ইউরোপীয় ইউনিয়নে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে লুক্সেমবার্গ চাকরি পেতে সুবিধা পাওয়া যায়। লুক্সেমবার্গ কাজের চাহিদা মূলত বিভিন্ন সেক্টরের উপর নির্ভর করে। যেমন-
বর্তমানে লুক্সেমবার্গ তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি সেক্টরে সফটওয়্যার ডেভেলপার, আইটি সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বেশি হয়ে থাকে।
অপর দিকে লুক্সেমবার্গ স্বাস্থ্য সেবা সেক্টরে ডাক্তার এবং ফিজিওথেরাপিস্টের চাহিদা বেশি। লুক্সেমবার্গে স্বাস্থ্যসেবা খাতে দক্ষ নার্সদের চাহিদাও তুলনামূলক বেশি।
এছাড়া লুক্সেমবার্গ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নির্মাণ সেক্টরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং নির্মাণ শ্রমিক সহ ইলেকট্রিশিয়ানের চাহিদা তুলনামূলক বেশি।
লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে
বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসার মাধ্যমে লুক্সেমবার্গ যাওয়া যায়। লুক্সেমবার্গ যাওয়ার খরচ মূলত ভিসার ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে কম বেশি হয়ে থাকে।
বর্তমানে লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে সর্বনিম্ন প্রায় ৯ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
তবে লুক্সেমবার্গ যাওয়ার ন্যূনতম ১ মাস পূর্বে এবং বিমান এয়ারলাইন্সের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে টিকেট বুক করলে খরচ তুলনামূলক কম হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে লুক্সেমবার্গ যেতে সর্বনিম্ন প্রায় ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ প্রায় ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় হয়ে থাকে।
শেষ কথা
সকল কাগজপত্র সঠিক ভাবে জমা দিলে ৫০ দিনের মধ্যে লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা তৈরি করা যায়। তবে জমাকৃত কাগজপত্রে ভুল থাকলে লুক্সেমবার্গ ভিসা তৈরিতে ৯০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই লুক্সেমবার্গ ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে কাগজপত্র সঠিক ভাবে জমা দিতে হবে। ধন্যবাদ।
FAQs (Frequently Asked Questions)
লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট কতদিনের জন্য দেওয়া হয়?
বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ন্যূনতম ১ বছর থেকে ৩ বছরের জন্য লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয়।
লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক ভিসার আবেদনের সময়সীমা কত?
সাধারণত লুক্সেমবার্গ কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা কর্তৃক চাকরির প্রস্তাব পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।
লুক্সেমবার্গে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার উপায় কী?
ন্যূনতম ৫ বছর লুক্সেমবার্গ বৈধ ভাবে থাকার পর লুক্সেমবার্গ সরকারের নিকট আবেদন করতে হয়।
লুক্সেমবার্গ বিমানের সাহায্যে যেতে কত সময় লাগে?
বিমানের ফ্লাইট এবং ট্রানজিটের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ থেকে লুক্সেমবার্গ যেতে প্রায় ১৫ ঘন্টা থেকে ১ দিনের বেশি সময় লাগতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে লুক্সেমবার্গের দূরত্ব কত কিলোমিটার?
লুক্সেমবার্গ ইউরোপের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, বাংলাদেশ থেকে লুক্সেমবার্গের দূরত্ব প্রায় ৭,৬১৩ কিলোমিটার।