পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য, কবিতা ও কিছু কথা ২০২৫

পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির হৃদয়ের একটি উজ্জ্বল উৎসব। পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য বলতে বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে ভাবনা প্রকাশ করাকে বোঝায়।

বাংলা বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য প্রতিটি বাঙালির আত্মপরিচয় ফুটিয়ে তোলে। এই বক্তব্য বাঙালির জাতীয় পরিচয়কে নতুন ভাবে সকলের মাঝে উপস্থাপন করে।

বাংলা বছরের এই দিন বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি কেন্দ্র পর্যন্ত উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে বাংলার ঐতিহ্য ফুটে ওঠে।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য

পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে পহেলা বৈশাখের গুরুত্ব এবং পহেলা বৈশাখের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানানো যায়। বক্তব্যটি দেওয়া হলো-

সন্মানিত অতিথিবৃন্দ, প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সহপাঠী বন্ধুরা, আসসালামু আলাইকুম-

পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য প্রদান করতে পেরে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। পহেলা বৈশাখ শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালি জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। বাংলা বছরের প্রথম দিনটি আমাদের জীবনে নতুন আশা, নতুন লক্ষ্য এবং আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। এ দিনটিকে ঘিরে আমরা সবাই মেতে উঠি আনন্দ-উৎসবে।

এই দিন আমাদের পরিধানে আসে ঐতিহ্যবাহী পোশাক, চলে পান্তা-ইলিশের আয়োজন, আর গ্রামীণ মেলায় থাকে বাউল গান, নকশি কাঁথা ও হস্তশিল্পের পসরা। এই দিনটি শুধুমাত্র উৎসবের জন্য নয়, বরং আমাদের ইতিহাস, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। আমরা পুরনো সব দুঃখ, হতাশা ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই।

পরিশেষে বলব, পহেলা বৈশাখ হোক আমাদের ঐক্য, ভালোবাসা ও বাঙালিত্বের প্রতীক। শুভ নববর্ষ!

পহেলা বৈশাখ নিয়ে কবিতা

বাংলা বছরের প্রথম দিন বা পহেলা বৈশাখ নিয়ে লেখা কবিতা আমাদের আবেগকে শব্দের রূপ দেয় এবং প্রতিটি কবিতায় মানুষের হৃদয়ের রঙিন আশা ওঠে আসে।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে কবিতা

১.
নতুন বছর এলো হেসে,
আনন্দে মন ভাসে।
পহেলা বৈশাখের মেলায়,
বাংলা হৃদয় হাসে।

২.
এসো হে বৈশাখ, এসো প্রাণে,
নতুন আলো উঠুক গানে।
পুরনো সব কষ্ট ভেসে,
সুখের দিন ফিরে আসুক হেসে।

৩.
পান্তা-ইলিশ, আলপনা, গান,
বাঙালির প্রাণে রঙের টান।
এ এক উৎসব মধুর কাব্য,
বৈশাখের মাঝে হৃদয় স্বার্থক।

৪.
নববর্ষের নব প্রতিশ্রুতি,
আনো মনেতে শুভ দৃপ্তি।
আলোক ছড়াও নতুন দিনে,
পহেলা বৈশাখ থাকুক চিরদিনে।

৫.
লাল-সাদা শাড়ি পরে,
হাতে চুড়ি খন্‌ খনে করে।
রাঙা মুখে নতুন ভোর,
বৈশাখ এলো প্রাণ জুড়ায় ঘোর।

বৈশাখী মেলা নিয়ে কবিতা

বাংলা বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। বৈশাখী মেলা নিয়ে কবিতায় বাংলার সকল মানুষের ভিড় ও হাসি আনন্দের শব্দ ভেসে আসে।

১.
আকাশ জুড়ে রঙের খেলা,
শুরু হলো বাংলা মেলা।
নতুন করে বাঁধা আশা,
বৈশাখে হয় ভালোবাসা।

২.
মেলার মাঠে পুতুল নাচে,
হাসি ফোটে শিশুদের মুখে।
চুড়ি, মাটির জিনিস, পিঠা—
বৈশাখী মেলায় প্রাণ জাগে ঠিক তা।

৩.
বাউল গান আর দোতারা,
গল্প বলে চিরদিনের তারা।
মেলার পাড়ায় জীবন খেলে,
বাঙালির হৃদয় সেথায় মেলে।

৪.
গ্রামবাংলার প্রাণের ছবি,
বৈশাখী মেলায় জেগে রবি।
শিশুরা হাসে, বয়স্ক হাঁসে,
এই মেলায় সুখ বাঁধা থাকে।

৫.
মাটির পাত্র, বাঁশের বাঁশি,
হস্তশিল্পে বাঙালির হাসি।
বৈশাখী মেলা শুধু মেলা নয়,
এ যেন গ্রামীণ জীবনের জয়।

বৈশাখী প্রেমের কবিতা

পহেলা বৈশাখ মানেই নতুন বছর শুরু বার্তা। বৈশাখী প্রেমের কবিতা বৈশাখের গরম হাওয়ার মতোই মনে প্রেমের আবেগ জাগ্রত করে এবং হৃদয়কে দুলিয়ে তোলে।

বৈশাখী প্রেমের কবিতা

১.
বৈশাখী হাওয়া গায়ে মেখে,
তোমার সাথে হাঁটি একে-একে।
নতুন বছরে নতুন শুরু,
প্রেমে ভেজে প্রতিটা দুপুর।

২.
লাল-সাদা শাড়িতে তুমি,
বুকের মাঝে জাগাও ঝড়-ঝুমি।
বৈশাখ এলো ভালোবাসা নিয়ে,
চোখে চোখে জ্বলুক আশার দাগিয়ে।

৩.
নাগরদোলায় তোমার পাশে,
হৃদয় আমার হঠাৎ নাচে।
ভীড়ের মাঝে হাতটা ধরা,
বৈশাখে প্রেমে জীবন গড়া।

৪.
তোমার চুলে গাঁথা গাজরা,
আমার হৃদয় করছে নাচা।
বৈশাখী দিনে প্রণয়ের গান,
চিরকাল থাকুক এই সন্ধান।

৫.
পহেলা বৈশাখ প্রেমের দিন,
নতুন করে হৃদয়ের চিন।
তোমার স্পর্শে বৈশাখী হাওয়া,
ভালোবাসা পাক চির উত্তরণ।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে কিছু কথা

বাংলা বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ শুধুমাত্র বাংলা ক্যালেন্ডারের একটি তারিখ নয়। পহেলা বৈশাখ সকল বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রতীক।

বৈশাখের গরম হাওয়ায় প্রত্যেকটি বাঙালি ঐতিহ্যের মূল শিকড়ে পৌঁছে যায়। যেখানে মাটির গন্ধ এবং বাঙ্গালীদের সহজ সরল জীবনের চিত্র ফুটে ওঠে।

পহেলা বৈশাখ আসলে গ্রাম বাংলার স্কুল কলেজে বিভিন্ন বৈশাখী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের করা হালখাতা বাংলার প্রতিটি গ্রাম উৎসবমুখর করে তোলে।

শেষ কথা

পহেলা বৈশাখ নিয়ে বক্তব্য শুধু আনুষ্ঠানিকতার অংশ নয়, এই বক্তব্য প্রতিটি বাঙালির আত্মজাগরণের মাধ্যম। যেখানে প্রত্যেকটি বাঙালি তার শেকড়কে খুঁজে পায়। বাংলা নববর্ষ নিয়ে বক্তব্য প্রত্যেকটি বাঙালির লোকসংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সহ সাহিত্যের ধারা এবং বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা মনে করিয়ে দেয়।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment

Scroll to Top